যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কী? বৈশিষ্ট্যসমূহ ও সফলতার পূর্বশর্তবলী

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কী

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কী? বৈশিষ্ট্যসমূহ ও সফলতার পূর্বশর্তবলী

আজকের পোস্টটি আমরা আলোচনা করব যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কী বা কাকে বলে? যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার পূর্বশর্তবলী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। নিচে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সফলতার পূর্ব শর্তাবলী ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কী

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাকে বলে?

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে বুঝায় যে সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেয় এবং উভয় সরকার স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে শাসন কার্য পরিচালনা করে ও স্বতন্ত্র ক্ষমতা ভোগ করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলা হয়।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সরকার ব্যবস্থার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দেশের সমগ্র ক্ষমতা কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে এমনভাবে বন্টন করে দেয়া হয় উভয়ের স্ব-স্ব এলাকায় সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারে। তাই আধুনিক বিশ্বে অনেক দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা চালু আছে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর?

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গঠন প্রকৃতি ও শাসন ব্যবস্থার বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য গুলো পরিলক্ষিত হয় :

  • দ্বৈত ধরনের সরকার ব্যবস্থা : যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন দু প্রকার সরকার বিদ্যমান থাকে। যথা : এক কেন্দ্রীয় সরকার এবং অপরটি প্রাদেশিক সরকার। উভয় সরকার ব্যবস্থায় সংবিধান থেকে ক্ষমতা লাভ করে এবং উভয়ই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং তাদের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে।
  • দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা : দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ সরকার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় আইনসভার সাধারণ দুটি কক্ষ থাকে, উচ্চকক্ষ ও নিম্ন কক্ষ। উচ্চকক্ষ সাধারন জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয় এবং নিম্নকক্ষ প্রদেশিক পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকে। উচ্চকক্ষ জনসাধারণের এবং নিম্নকক্ষ অঙ্গরাজ্য গুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। উদাহরণস্বরূপ ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করা যায়।
  • ক্ষমতা বন্টন : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল ক্ষমতা বন্টন। জাতীয় স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রেখে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার মধ্যে বিধিমতো ক্ষমতা বন্টিত হয়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, মুদ্রা ও পররাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি বিষয়ক কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নেস্ত্র থাকে। অন্যদিকে খাদ্য, শিক্ষা, শ্রম ও অন্যান্য বিষয়টি প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকে।
  • স্বায়ত্তশাসন : স্বায়ত্তশাসন যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পুলিশগুলো এখানে সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশগুলো কোন সার্বভৌম শক্তি থাকে না।
  • সমমর্যাদা : যুক্তরাষ্ট্রীয় অঙ্গ বা অঙ্গ রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে সমমর্যাদা বর্তমান থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেক অঙ্গ রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকগণ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সমমর্যাদা ও অধিকার পেয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের রক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
  • দ্বৈত আইন : দুটি পর্যায়ে যুক্তরাণ প্রণীত থাকে। একটি কেন্দ্রীয় আইন অন্যটি রাজ্য আইন। কেন্দ্রকে প্রদত্ত ক্ষমতার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় আইনসভা এবং রাজ্যকে প্রদত্ত ক্ষমতার ভিত্তিতে রাজ্য আইনসভা আইন প্রণয়ন করে থাকে। উভয় সরকারের প্রণীত আইনি নাগরিকদেরকে মান্য করতে হয়।
  • দ্বৈত বিচার ব্যবস্থা : যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল দ্বৈত বিচার ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিচার ব্যবস্থাপিত ধরনের। কেন্দ্রীয় আইনের জন্য কেন্দ্রীয় বিচার ব্যবস্থা এবং রাজ্যের আইনের জন্য অঙ্গরাজ্যের বিচার ব্যবস্থা থাকে।
  • যুক্তরাষ্ট্রীয় মনোভাব : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় জনগণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় মনোভাব অক্ষুন্ন থাকে। এতে প্রাদেশিক সরকার গুলো যেমন কেন্দ্রের প্রতি অনুগত্য প্রদর্শন করবে, ঠিক তেমনি ভাবে পড়তে শিখ সত্তাকেও সয়ত্নে অটুট রাখবে।

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা নিঃসন্দেহে একটি উৎকৃষ্ট সরকার ব্যবস্থা। অন্যান্য সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য ভিন্নধর্মী। এ সরকারের প্রকৃত পরিচয় তার বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে নিহিত রয়েছে।

 

☞ আরো পড়ুন : লিখিত ও অলিখিত সংবিধান এর তুলনামূলক পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য

 

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সফলতার পূর্ব শর্তাবলী আলোচনা কর?

যুক্তরাষ্ট হচ্ছে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতির ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ এক সম্মেলন। অধ্যাপক কে. সি. হুয়ার বলেছেন, ” Community Of State Mast Desire To Be United, But Not To Be Unitary. ” সেজন্য বলা হয়ে থাকে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যের জন্য কতগুলো পূর্বশর্ত আছে বা সফলতার পূর্ব শর্তবলী আছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সফলতার পূর্ব শর্তাবলী আলোচনা করা হলো :

  1. ভৌকিক নৈকট্য : যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যের জন্য ভৌগোলিক নৈকট্য থাকায় একান্ত জরুরি। কারণ এই নৈকট্য ছাড়া ভাবের আদান-প্রদান সম্ভব হয় না। রাজ্যগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির দৃঢ় করতে তাদের ভৌগোলিক নৈকট্য একান্তভাবে প্রয়োজন।
  2. শক্তি সামর্থের ব্যাপারে সামঞ্জস্য : সম্পদ সংহতি ও জনবলের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অঙ্গরাজ্যের সাথে অন্য অঙ্গরাজের খুবই পার্থক্য থাকলে অপেক্ষাকৃত ধনি ও শক্তিশালী রাজ্য কর্তৃক দরিদ্র ও দুর্বল রাজ্যগুলো নিয়ন্ত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা রাষ্ট্রের সফলতার পরিপন্থী।
  3. অঙ্গরাজ্য গুলোর মধ্যে সাম্য ও সহযোগিতা : যুক্তরাষ্ট্র গঠনকারী অঙ্গরাজ্য গুলোর মধ্যে সহযোগিতা অভাব ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সাফল্যমন্ডিত হতে পারে না। কোন বিশেষ অঙ্গরাজ্য একক প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সাফল্যমন্ডিত হতে পারে না। সাম্য ও সমান অধিকারের ভিত্তিতে তারা পরস্পর সহযোগিতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ফলশ্রুতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সফলতা লাভ করে।
  4. যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : অঙ্গরাজ্য গুলোর মধ্যে শাসন ব্যবস্থার সাদৃশ্য যুক্তরাষ্ট্র সাফল্যের স্বার্থে কাম্য। সরকারের গঠন এবং প্রশাসনিক পদ্ধতি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন রকম হলে অঙ্গরাজ্য গুলোর মধ্যে বি-বাদ এর সম্ভাবনা থাকে এবং কালকরমে তার গৃহযু-দ্ধে পরিণত হতে পারে।
  5. রাজনৈতিক চেতনা ও উপযুক্ত শিক্ষা বিস্তার : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতা পূর্ব শর্তাবলী এরমধ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাকে স্বীকার ও সংরক্ষণ করার মত সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি এবং একই সাথে আঞ্চলিক স্বতন্ত্রবোধের সৃষ্টি করতে হবে। আবার জাতীয়তা ও আঞ্চলিকতার মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় সাধন করা জরুরী। তবেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সফলতার মুখ দেখবে।
  6. উত্তম সংবিধান : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষমতা বন্টন প্রাদেশিক সরকারের অধিকার রক্ষা ও নাগরিক চেতনাবোধ গড়ে তোলার জন্য একটি উত্তম সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সফলতার জন্য যা খুবই প্রয়োজন ।
  7. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে কোন রূপ দ্বন্দ্ব দেখা দিলে যাতে সঠিক বিচারের মাধ্যমে মীমাংসা, সংবিধানের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় সেজন্য একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের স্বাধীন ওনিরপেক্ষ বিচার বিভাগ থাকা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার পূর্ব শর্তাবলী পূরণ করা কঠিন। এ কারণে বিশ্বের অল্প কয়েকটি রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। তবে প্রত্যেক শাসন ব্যবস্থা তখনই সাফল্য অর্জন করবে , যখন সেখানে শাসকদের সমানোভাব বিরাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা তখনই সফলতা অর্জন করবে যখন শাসক ও শাসিত শ্রেণী উভয়েরই সুন্দর মানসিকতা সেখানে যুক্ত হবে।

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন :

Facebook Page : https://facebook.com/rvwbd/

Sohel Mahmud
About Sohel Mahmud 10 Articles
Owner & Administrator Of RVWBD.COM

1 Trackback / Pingback

  1. শিল্প বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল ও ঐতিহাসিক পটভূমি আলোচনা কর।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*