নিয়ত বায়ু প্রবাহের শ্রেণীবিভাগ করো এবং বৈশিষ্ট্য সহ বর্ণনা

নিয়ত বায়ু প্রবাহ

নিয়ত বায়ু প্রবাহের শ্রেণীবিভাগ করো এবং বৈশিষ্ট্য সহ বর্ণনা

আজকের পোস্টে, নিয়ত বায়ু প্রবাহ কাকে বলে? ( Planetary Wind ) নিয়ত বায়ু প্রবাহের শ্রেণীবিভাগ করো এবং নিয়ত বায়ু প্রবাহের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ এর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বায়ু প্রবাহের বিস্তারিত বর্ণনা নিচে দেয়া হল।

নিয়ত বায়ু প্রবাহ

বায়ু সর্বদা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। একে কোন এক স্থানে স্থির ভাবে ধরে রাখা যায় না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গতিতে তা বয়ে চলে। পৃথিবীতে তাপের সমতা রক্ষার জন্য বায়ুপ্রবাহ তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। উষ্ণ মন্ডলে বায়ুর উত্তাপের অধিক্য এবং হিম মন্ডলে বায়ুর উত্তাপের ঘাটতি বিরাজমান। ফলে বায়ুর এ তাপের স্থিতি বজায় রাখার জন্য বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের বায়ুপ্রবাহিত হয়। এদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো নিয়ত বায়ু প্রবাহ।

 

নিয়ত বায়ু প্রবাহ কাকে বলে?

সমগ্র পৃথিবীর বায়ু দ্বারা আবৃত। তারপর তার তম জনিত কারণে এর ঘনত্ব কোথাও বেশি আবার কোথাও কম। পৃথিবীর তথাকথিত ৪টি উচ্চচাপ বলয় ও ৩টি নিম্নচাপ বলয় দিকে যে বায়ু সারাবছর নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয় তাকে নিয়ত বায়ুপ্রবাহ বা ( Planetary Wind ) বলে।

নিয়ত বায়ু প্রবাহের শ্রেণীবিভাগ করো এবং বৈশিষ্ট্য
চিত্র : পৃথিবীব্যাপী নিয়ত বায়ু প্রবাহ

 

নিয়ত বায়ু প্রবাহের বৈশিষ্ট্য সমুহ বর্ণনা দাও

নিয়ত বায়ুপ্রবাহ পৃথিবীতে বিপ্লব রহমান একটি বায়ু প্রবাহ। এবার উপরবহন মূলত পৃথিবী জুড়ে একটি আবর্ত সৃষ্টি করে। নিচে নিয়ত বায়ু প্রবাহের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :

  • নিয়ত বায়ু প্রবাহ পৃথিবীর চাপ বলয় গুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
  • এ বায়ু সর্বদা উচ্চচাপ বলায় হাতে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
  • তাপ ও চাপের তারতম্যের জনিত কারণে নিয়ত বায়ু বায়ুপ্রবাহিত হয়।
  • নিয়ত বায়ুপ্রবাহ এ বৃষ্টিপাত কম হয়
  • নিয়ত বায়ুর যে অংশ ও সমুদ্র দিয়ে আসে সে স্থানে বৃষ্টিপাত হয়।
  • এ বায়ুর গতিবেগ উত্তর গোলার্ধে (১৮ কি.মি./ঘন্টা) অপেক্ষা দক্ষিণ গোলার্ধে (২২ কি.মি./ঘন্টা) বেশি।
  • নিয়ত বায়ু শীতকালে সর্বাধিক শক্তিশালী হয়।

 

নিয়ত বায়ু প্রবাহের শ্রেণীবিভাগ করো ও বৈশিষ্ট্য সহ বর্ণনা দাও

নিয়তবায়ু প্রবাহ ৫ প্রকার। এমনি বায়ু প্রবাহের শ্রেণীবিভাগ এবং বায়ু প্রবাহের বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্ণনা করা হলো :

  1. আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ু
  2. নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ু
  3. মধ্য অক্ষাংশ অঞ্চলের পশ্চিমা বায়ু
  4. উপক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ু
  5. মেরু বায়ু

 

আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ু

আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ু
চিত্র : আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ু

উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় হতে যে বায়ু প্রবাহ নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে আয়ন বায়ু বলে। বায়ু প্রবাহের সাহায্যে সারা বছর বাণিজ্য চলতে একে বাণিজ্য বায়ু ও বলা হয়। পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলের অর্ধেক ভাগেরও বেশি অঞ্চলে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। এবারো ফেরেলের সূত্রানসারে উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব দিক হতে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব দিক হতে প্রবাহিত হয়। উভয় আয়ন বায়ু যতই নিরক্ষরেখার নিকটে অগ্রসর হয়, বায়ুর গতিবেগ ততোই দুর্বল হয়ে পড়ে। নিরক্ষরেখার উপর আসলে বায়ুর গতিবেগ একেবারেই নিস্তেজ হয়ে যায় এবং একটা শান্ত বলাই সৃষ্টি হয় যাকে নিরক্ষীয় শান্ত বলায় বলে।

আয়ন বায়ু বাণিজ্য বায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ :

  • আয়ন বায়ু উচ্চচাপ বলে হতে নিম্নচাপ বলের দিকে প্রবাহিত হয় বলে এ বায়ু জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বেশি।
  • আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ুতে বৃষ্টিপাত কম হয়।
  • এ বায়ুর যে অংশসমূহ যদি আসে সে স্থানে বৃষ্টিপাত হয়
  • আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ুর গতিবেগ উত্তর গোলার্ধে ১৮ কিলোমিটার/ঘণ্টা অপেক্ষা দক্ষিণ গোলার্ধে ২২ কিলোমিটার/ঘন্টা বেশি

 

নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ু

নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ু
চিত্র : নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ু

নিরক্ষীয় অঞ্চলের দুই আয়ন বায়ুর মাঝখান দিয়ে যে বায়ু পশ্চিম দিক হতে প্রবাহিত হয় তাকে নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ু বলে। দুটি আয়ন বায়ু যখন নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হয় তখন অবিস্মরণ হয় ( ভিন্ন দিক হতে দুটি বায়ুপ্রবাহ এসে মিলিত হলে তাকে অবিস্মরণ বলে)। প্রশান্ত মহাসাগরে এ অভিসরণ সর্বাধিক বলে এ অঞ্চলে শান্ত বায়ু বিরাজ করে।

নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ুর উপর গোলার্ধে ১৫ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে প্রবাহিত হয়।
  • এ বায়ু আয়ন বায়ুর মতো সারা বছর নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়।
  • স্থানভেদে এ বায়ুর গতিবেগ ঘন্টায় ২ থেকে ৬ কিলোমিটার।

 

মধ্য অক্ষাংশ অঞ্চলের পশ্চিমা বায়ু

মধ্য অক্ষাংশ অঞ্চলের পশ্চিমা বায়ু
চিত্র : মধ্য অক্ষাংশ অঞ্চলের পশ্চিমা বায়ু

উভয় গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলায় হতে উপমেরু নিম্নচাপ বলয়ের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে মধ্য অক্ষাংশ অঞ্চলের পশ্চিমা বায়ু বলে। এ বায়ু উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হতে দক্ষিণ গোলার্দে উত্তর-পশ্চিম দিক হতে প্রবাহিত হয়। উত্তর গোলার্ধ অপেক্ষা দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ বেশি বলে এ বায়ু অত্যন্ত শক্তিশালী, দৃঢ় এবং স্থায়ী। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে স্থলভাগ জনিত কোন চাপের তারতম্য হয় না। দক্ষিণ গোলারদের সমুদ্র বক্ষে প্রায় ৪০ ডিগ্রি অক্ষাংশ বরাবর এ বায়ুর গতিবেগ বেশি তীব্র থাকে বলে একে গর্জনশীল চল্লিশা বলে। আর ৫০ দিক দিয়ে অক্ষাংশকে ভয়ঙ্কর পঞ্চাশা বলে।

মধ্যা অক্ষাংশ অঞ্চলের পশ্চিমা বায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • পশ্চিমা বায়ু আয়ন বায়ুর বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়।
  • মধ্যা এখন সঞ্চলের পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ উত্তর গোলার্ধ অপেক্ষা দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি শক্তিশালী।
  • এ বায়ু প্রবাহের ফলে বৃষ্টিপাত হয়।

 

উপক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ু

উপক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ু
চিত্র : উপক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ু

সাধারণত উভয় গোলার্ধে ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি পক্ষাংশের উচ্চচাপ বলয় হতে যে বায়ু প্রবাহ নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রবাহিত হয় তাকে আয়ন বায়ু বলে। আবার যে বায়ু উভয় মেরুর নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে প্রত্যয়ন বা পশ্চিমা বায়ু বলে। ফলে ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে বায়ুতে সব সময় পরিচালন চলতে থাকে। এ অঞ্চলে বায়ুর উপর হতে নিচের দিকে নামে বলে তা শুষ্ক থাকে এবং এখানে বিশেষ কতগুলো মরুভূমি সৃষ্টি হয়। তাই এই অঞ্চলের বায়ুকে উপক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ু বলে।

উপক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • উপক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ু উপায়গোলার্ধে ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে প্রবাহিত হয়।
  • এটি একটি শুষ্ক বায়ু।
  • এ বায়ু প্রবাহের বেক অতি অল্প এবং বায়ু প্রবাহের দিক ও অনিশ্চিত।
  • এ বাড়িতে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।

 

মেরু বায়ু

মেরু বায়ু
চিত্র : মেরু বায়ু

সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলায় হতে যে বায়ু নিয়মিতভাবে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে মেরু বায়ু বলে। এ বায়ু ফেরেলের সূত্র অনুসারে দেখে উপায় বলার দে উত্তর-পূর্ব দিক হতে দক্ষিণ গোলার্ধের দক্ষিণ-পূর্ব বায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। মেরু বায়ুর বেগ উত্তর গোলার্ধের চেয়ে দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি প্রবল।

মেরু বায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • মেরু ভাই অত্যন্ত শুষ্ক ও শীতল।
  • দক্ষিণ গোলার্ধে এ বায়ু প্রবাহের ফলে প্রায়ই ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়।
  • উত্তর গোলার্ধে এ বায়ু গতিবেগ কম।

 

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বায়ু চাপের তারতম জনিত কারণে বায়ুপ্রবাহের উৎপত্তি। চাপ বলয় গুলোর মধ্যে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় বিশ্বব্যাপী বায়ু সঞ্চালনের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী। সমুদ্রভাগের উপর উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী থাকে গ্রীষ্মকালে। ফলে মহাদেশের উপর এ সময় তাপ জনিত নিম্নচাপ বিরাজ করে। এতে উচ্চচাপ বলয় গুলো উষ্ণমণ্ডলীয় আয়ন বায়ু ও নাতিশীতোষ্ণ পশ্চিমা বায়ু অবস্থান ও গতি প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণ করে।

☞ আরে পড়ুন : ( GIS) জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার বা প্রয়োজনীয়তা ও উপাদান আলোচনা কর

চলমান এই বিশ্বে অন্যান্য সবকিছুর মত বায়ু রাশিয়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সর্বদা ছুটে চলছে। বায়ুর এ অবিরাম ছুটে চলার পিছনে নানাবিদ প্রকৃতির কারণ কাজ করে। পৃথিবীতে তাপের সমতা রক্ষার জন্য বায়ুপ্রবাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের বায়ু প্রবাহিত হয়। এদের মধ্যে নিয়ত বায়ু প্রবাহ অন্যতম।

 

 

এসএসসি, এসএসসি, ডিগ্রী, অনার্স সাজেশন পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা নিত্যনতুন পরীক্ষা অনুযায়ী প্রতিবছর ১০০% কমনো উপযোগী সাজেশন দিয়ে থাকে। ২০২৪ সালে যারা পরীক্ষার্থী আছেন। তাদের জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের সাজেশন প্রদান করা হবে।

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন :
https://facebook.com/rvwbd/

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*