বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়

অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও ভুমিকা বা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা, কৃষিতে বাংলাদেশের অবস্থান, বাংলাদেশের কৃষি খাতের অবদান এবং বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের উপায় বা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় এবং বাংলাদেশে কৃষির আধুনিকায়নের উপায় আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব
বাংলাদেশের প্রধান উৎপাদনের খাত হলো কৃষি। নদীমাতৃক ও পলিগঠিত সমতল ভূমির এদেশের মানুষের স্বাভাবিক ও সহজ পেশা কৃষি। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বলা হয়। বাংলাদেশের চতুর্থ পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনা ধরিলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে “প্রধানত কৃষিভিত্তিক ” বলা হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের জন্য এদেশের কৃষি কাঠামো অমল পরিবর্তন প্রয়োজন। বর্তমানে এদেশে প্রায় সর্বত্র সনাতন কৃষি কাঠামো বিরাজ করছে। ব্যবসায়ী হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মুনাফা উদ্দেশ্যে স্থাপিত কৃষি খামার এ দেশে এখনো বিরল।

 

☞ আরো পড়ুন : অনার্স ২য় বর্ষ বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩ সাজেশন [ সকল বিভাগ ]

 

কিন্তু কৃষি উন্নয়নের জন্য সনাতন কৃষি কাঠামোকে আধুনিক মুনাফা অন্বেষী কৃষি কাঠামোতে রূপান্তর করা প্রয়োজন। এ রূপান্তরই বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে গৃহীত মুক্ত বাজার অর্থনীতির আ দর্শনের সাথে সংহতিপূর্ণ একমাত্র কৃষি উন্নয়নের উপায় বা কৌশল। অতএব এমন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা প্রয়োজন যেন কৃষি একটি লাভজনক ব্যবসায় হয় এবং মূলধন আকৃষ্ট করতে পারে। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় গুলো বা বাংলাদেশের কৃষি আধুনিক গানের উপায়।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা আলোচনা করো

নিচে বিস্তারিত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কৃষিতে বাংলাদেশের অবস্থান ও বাংলাদেশের কৃষি খাতের অবদান অকল্পনীয়। কারণ, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক একটি দেশ। এ উপর ভিত্তি করে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

জি.ডি.পি. তে কৃষির অবদান

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জি.ডি.পি. একক খাত হিসেবে সর্বাধিক অবদান রাখে কৃষি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ অনুযায়ী, জি.ডি.পি. তে কৃষির বিভিন্ন উপখাত ( ফসল, মৎস্য, পশু পালন ও বন) এর সমন্বিত অবদান ২০১০-১১ অর্থবছর ছিল ১৯.৯৫% এবং যোগাযোগ ও পরিবহন খাতের অবদান ছিল ১২.১৯০% । অতএব এখানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রধান অবলম্বন কৃষিখাত। তাই বলা যায় জি.ডি.পি. তে কৃষির অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষি

বাংলাদেশে এখনো প্রায় আশি পার্সেন্ট মানুষ গ্রামে অঞ্চলে বাস করে। এবং তারা প্রকান্তরে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বি. এস. এস লেবার ফোর্স সার্বে, ২০১২ জানুয়ারির দেশের মোট শ্রম শক্তির ৪৩% কৃষিতে নিয়োজিত আছে । অর্থাৎ দেশের মোট কর্মসংস্থানের অর্ধেক কৃষিখাত সৃষ্টি করে। ১৯৯৬ সালের শ্রমশক্তির ৬৩% কৃষিতে নিয়োজিত ছিল। এ তথ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির কৃষি নির্ভরশীলতা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। তাই বলা যায় কর্মসংস্থান শিশুতে কৃষির অবদান গুরুত্বপূর্ণ ।

রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষির অবদান

বাংলাদেশে, রপ্তানি বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ অনুযায়ী ২০০৯-১০ অর্থবছরের দেশের মোট রপ্তানি এককভাবে কৃষিজাত প্রাথমিক পণ্যের অবদান ছিল শতকরা ৫.৪৪ ভাগ। এছাড়া অন্যান্য শিল্প যার দ্রব্য বিশেষ করে পাট ও চামড়া রক্ত নিতে কৃষির অবদান উল্লেখযোগ্য। গুরুত্বের দিক দিয়ে নীট ওয়ার ও তৈরি পোশাকের রপ্তানি পরে কৃষির স্থান।

খাদ্যের যোগান

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে জনগণের আয়ের সিংহভাগ খাদ্য ক্রয়ে ব্যয় হয়। এ খাদ্যের যোগান দেয় কৃষিখাত। তবে বার্ষিক প্রায় ২০ লক্ষ টন খাদ্যশস্যের ঘাটতি আমদানি মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। কোন বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হলে বাংলাদেশের আকাল দেখা দেয়। এতে প্রমাণিত হয় যে কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সরকারের রাজস্ব সৃষ্টি

বাংলাদেশের সরকার ২০০৯-১০ অর্থবছরে ভূমি রাজস্ব বাবদ ৩৯২ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করে। এটি সরকারের মোট কর রাজস্ব প্রায় ০.৬১%। এছাড়া কৃষি পণ্যের উপর আবগারি কর, কৃষি আয়ের উপর আয়কর ইত্যাদি উপায়ে সরকারে আরো অনেক রাজস্ব অর্জন করে।

এছাড়াও বিভিন্ন কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি এ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কৃষির উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। মোটকথা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম।

 

বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের উপায় বা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় বর্ণনা কর

বাংলাদেশের কৃষি খাত বহু সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যা সময়ের কারণে এদেশে কৃষি পশ্চাৎপদ এবং উৎপাদনশীলতা অতি স্বল্প। বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে দেশের জন্য কৃষি কাঠামো অমল পরিবর্তন প্রয়োজন। অন্যথায় বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের উপায় বা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় অথবা বাংলাদেশের কৃষির আধুনিকায়নের উপায় সম্ভব নয়। কিভাবে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি বা বাংলাদেশের কৃষি আধুনিকায়নের উপায় উন্নত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, নিচে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি উৎপাদনের বৃদ্ধির উপায় এবং বাংলাদেশের কৃষির আধুনিকায়নের উপায় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

অবকাঠামো নির্মাণ

বর্তমানে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের, রাস্তা, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি অবকাঠামো অভাবের কারণে লাভজনক কৃষিক আমার স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না অতএব অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সরকারি উদ্যোগী হওয়া অবশ্যক।

আধুনিক চাষ পদ্ধতির ঝুঁকি হ্রাসকরণ

খোরাকি চাষি পারিবারিক শ্রম, নিজস্ব বীজ, গৃহপালিত পশুর গোবর সার ও গায়ক পরিশ্রমের শেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে যে চাষাবাদ করে তাতে ঝুঁকি কম। কিন্তু আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে উপযুক্ত উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, যান্ত্রিক শেচ, কীটনাশক ইত্যাদি সময় মত ন্যায্য মূল্যে পাওয়াতে যথেষ্ট ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতঃপর উৎপন্ন ফসল বাজারজাত করার সময় যথাযথ মূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি থাকে। তাই কৃষক-ঝুঁকিপূর্ণ আধুনিক চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করতে উৎসাহী হয় না। সে ঝুকিবিহীন খোরাকির সংস্থান চায়।

ভূমি সংস্কার

বাংলাদেশে বর্তমানে যে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা বিরাজমান আছে তা সংস্কার প্রয়োজন। বিগত দিনে যে ভূমি সংস্কার হয়েছে তা বাস্তবে তেমন ফলশ্রুতি হয়নি।

কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণের সুব্যবস্থা

লাভজনক কৃষি উদ্যোগের অন্যতম অন্তরায় ত্রুটিপূর্ণ বিপন্ন ব্যবস্থাকে সব তার উৎপন্ন দ্রব্য যথাসময়ে যথাস্থানে বাজারজাত করতে পারে না বিধায় উপযুক্ত মূল্য পায় না। তাই কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ সুবস্থা প্রয়োজন।

গুদামজাতকরণের সুবিধা

বাংলাদেশী পল্লী অঞ্চলে কৃষি পণ্য গুদামজাতকরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। কিন্তু কৃষি পণ্যের ক্ষয় রোধের জন্য কৃষকের খামারের নিকটবর্তী স্থানে গুদামজাতকরণের সুযোগ থাকা প্রয়োজন।

 

এছাড়াও কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের উপায় বা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় এবং বাংলাদেশে কৃষির আধুনিকায়নের উপায় নিশ্চিত করতে পারি। উপরোক্ত বিষয়গুলো যদি সঠিকভাবে কার্যকারিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কৃষিক উন্নয়ন বা আধুনিয়ান করা সম্ভব হবে।

শেষ কথা : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা অনেকটা অন্যান্য দেশের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষি বাংলাদেশের মানুষের প্রাথমিক উদ্যোগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে কৃষি সর্বাধিক ক্ষেত্রে কর্মজীবিত লোকদের উপার্জনের উৎস এবং বৃদ্ধির একটি মূল উপাদান।

বাংলাদেশের জলবায়ু, মাটির সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৃহত্তর প্রদর্শিত কৃষি সংস্থাগুলির উপস্থিতি কারণে কৃষি খাতে বাংলাদেশের বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। কৃষি উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কৃষি খাতে মানব সম্পদ, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং সংস্থাগুলির উন্নয়নে বৃহত্তর প্রচেষ্টা করেছে। কৃষি বাংলাদেশের মানুষের প্রাথমিক উদ্যোগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে কৃষি সর্বাধিক ক্ষেত্রে কর্মজীবিত লোকদের উপার্জনের উৎস এবং বৃদ্ধির একটি মূল উপাদান। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের উপায় বা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় এবং বাংলাদেশে কৃষির আধুনিকায়নের উপায় এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব ও ভুমিকা বা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব ও ভূমিকা ও জি.ডি.পি. তে কৃষির অবদান পরিলক্ষিত হয়।

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন :

Facebook Page : https://facebook.com/rvwbd/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *