সমাজ মনোবিজ্ঞান কি? সমাজ মনোবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও পদ্ধতি সমূহ

সমাজ মনোবিজ্ঞান কি

সমাজ মনোবিজ্ঞান কি? সমাজ মনোবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও পদ্ধতি সমূহ

আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব, ( Social psychology ) সমাজ মনোবিজ্ঞান কি? সমাজ মনোবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা, সমাজ মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি এবং সমাজ মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু আলোচনা করার। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

সমাজ মনোবিজ্ঞান কি

সমাজ মনোবিজ্ঞান কি?

সমাজ মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা। মনোবিজ্ঞান যে শাখায় সমাজে বসবাসরত ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে সমাজ মনোবিজ্ঞান বলে। এ শাখা সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তির আচরণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করে। সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা সমাজিক আচরণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে মানুষের ব্যবহার পরস্পরিক ক্রিয়া প্রত্যেক ক্রিয়া সম্বন্ধে আগ্রহী হন। সমাজ মনোবিজ্ঞানী শুধু ব্যক্তিকে আলোচনা করে না, সে সাথে ব্যক্তির উপর সামাজিক উপাদানের পর্যালোচনার মাধ্যমে দলীয় আচরণের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধেও আলোচনা করে থাকে।

 

☞ আরো পড়ুন : অনার্স ১ম বর্ষ মনোবিজ্ঞান সাজেশন ২০২৩ | Psychology 

 

সমাজ মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু আলোচনা কর?

সমাজ মনোবিজ্ঞানের প্রধান বিষয়বস্তু হল পারস্পরিক সম্পর্কের উদ্ভত ব্যবহার। সামাজিক উদ্দীপকের প্রেক্ষিতে মানুষ যে আচরণ করে তার সমাজ মনোবিজ্ঞানের পর্যালোচনার বিষয়বস্তু। এখানে সামাজিক উদ্দীপক বলতে বোঝানো হয়েছে যে সমাজের এক ব্যক্তির আচরণ উপর অন্য একজন ব্যক্তির প্রভাব। সমাজ মনোবিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যক্তি, কিন্তু এ ব্যক্তি সমাজের অন্যান্য সদস্যের ব্যবহার দ্বারা কিভাবে প্রভাবিত হয় তাও সমাজ মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। একজন ব্যক্তির প্রেষণা, মনোভাব, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, শিক্ষণ, অনুকরণ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য সামাজিক কাঠামো, সামাজিক আদর্শ ও অন্যান্য সামাজিক প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। সমাজ মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

  • বিভিন্ন মতবাদ : মনোবিজ্ঞানের এর শাখা সমাজ মনোবিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী প্রমুখ মনীষীদের মতাদর্শ আলোচনা করে। এসব মনীষীদের মতাদর্শ সমাজ মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে অলংকৃত করেছে।
  • সামাজিক শিক্ষণ প্রক্রিয়া : একজন শিশুর জন্ম লগ্ন থেকে শুরু করে ব্যক্তির শেষ পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সামাজিক শিক্ষণ কিভাবে প্রবাহিত করে তার সমাজের মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু এর মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষণ প্রক্রিয়া যেমন ; সহায়ক শিক্ষণ, প্রসঙ্গিক শিক্ষণ, অনুকরণ প্রভৃতি সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া এবং পরিবার খেলার সাথী ও বিদ্যালয়ে ইত্যাদি সামাজিক কারণের মাধ্যমে আলোচিত হয়।
  • গবেষণা পদ্ধতি : সমাজ মনোবিজ্ঞান ব্যক্তি আচরণ এবং ব্যক্তির উপর সামাজিক প্রভাব পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকেন। যেমন ; পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি, ক্ষেত্র অনুধ্যান পদ্ধতি, প্রশ্নমালা পদ্ধতি, জরিপ পদ্ধতি এবং পরীক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদি।
  • মনোভাব : মনোভাব সমাজ মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। ব্যক্তির মনোভাব কিভাবে গঠিত হয়? কিভাবে মনোহকে পরিবর্তন করা যায় এবং মনোভাবকে কিভাবে পরিমাপ করা যায় তার সমাজ মনোবিজ্ঞান ব্যাপকভাবে আলোচনা করে।
  • যৌথ আচরণ : সামাজিক আচরণের প্রধান বিষয় মানুষের যৌথ আচরণ। জনমত, প্রচারণা, জনতা, গুজব, পূর্ব সংস্কার, ফ্যাশন প্রবিতী যৌথ আচরণ সম্বন্ধে সমাজ মনোবিজ্ঞান আলোচনা করে।

 

এছাড়াও ( Social psychology ) সমাজ মনোবিজ্ঞান দলীয় আচরণ, নেতৃত্ব, মতানুবর্তিতা, যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়বস্তু সম্বন্ধেও আলোচনা করে থাকে।

 

সমাজ মনোবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব বা সমাজ মনোবিজ্ঞানের পরিসর বা প্রয়োজনীয়তা

মনোবিজ্ঞানের ন্যায় সমাজ মনোবিজ্ঞান ও মানুষের আচরণ সম্পর্কে অনুধ্যন করে। তবে মনোবিজ্ঞানের সাথে সমাজ মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় সামান্য পার্থক্য আছে। মনোবিজ্ঞান মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর সকল ধরনের আচরণ পর্যালোচনা করে। কিন্তু সমাজ মনোবিজ্ঞান সমাজে ব্যক্তির আচরণকে অনুধ্যান করে।

সমাজ মনোবিজ্ঞান সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তির আচরণকে পর্যালোচনা করে এবং ব্যক্তির আচরণের উপর প্রভাব সৃষ্টিকারী বিভিন্ন সামাজিক উপাদান সম্পর্কেও আলোচনা করে। অর্থাৎ, সমাজ মনোবিজ্ঞান ব্যক্তির আচরণের উপর পরিবেশের প্রভাব এবং পরিবেশের উপর ব্যক্তির প্রভাব সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করেন। ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়ের পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। এ সত্যটি সমাজ মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য আধুনিক সমাজ মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন ধারণা সম্মুখে এমন ভাবে সমাজ মনোবিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত করেন যাতে ব্যক্তি এবং সমাজ সম্বন্ধীয় ঘটনাবলী কোনটি যেন উপেক্ষিত না হয়। সমাজ মনোবিজ্ঞানী সমাজে ব্যক্তি এবং ব্যক্তিতে সমাজে দুই’য়ের পারস্পরিক সম্পর্কে উদ্ভূত বিষয়গুলির ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেন। সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা সমাজ মনোবিজ্ঞানের পরিষদ দুটি পর্যায়ের ধারণার মাধ্যমে প্রকাশ করেন যথা :

  1. প্রথম পর্যায়ের ধারণা : প্রথম পর্যায়ের ধারণা সমূহ ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপের সাথে সংযুক্ত। যেমন ; ব্যক্তির প্রেষণা, আবেগ, শিক্ষণ, মনোভাব, মূল্যবোধ প্রভৃতি নিয়ে প্রথম পর্যায়ের ধারণায় আলোচনা করা হয়।
  2. দ্বিতীয় পর্যায়ের ধারণা : দ্বিতীয় পর্যায়ের ধারণা সমূহ সমাজ ও বৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত। যেমন; প্রতিষ্ঠান, সামাজিক আদর্শ, সামাজিক কাঠামো, আদর্শভিত্তিক তত্ত্ব প্রভৃতি।

 

সুতরাং প্রথম পর্যায় ধারণা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ধারণা পরস্পরের সম্পর্ক উদ্ভূত বিষয়ের যে এলাকা তার সমাজ মনোবিজ্ঞানের পরিসরভুক্ত।

 

সমাজ মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর?

সামাজিক আচরণ পর্যালোচনার জন্য যেসব পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি

সমাজ মনোবিজ্ঞানের অনুধ্যনের ক্ষেত্রেও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি গুরুত্ব অপরিসীম। এ পদ্ধতি আলোচনাকালে আমরা দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে থাকি। এর একটি হল প্রাকৃতিক নিরীক্ষণ এবং অন্যটি নিয়ন্ত্রিত নিরীক্ষন। মনোবিজ্ঞান এবং অন্যান্য আচরণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রকৃতির পর্যবেক্ষণ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে কোন একটি ঘটনাকে অনুরূপভাবে আলোকন করাকে প্রাকৃতিক নিরক্ষন বলে। প্রাকৃতিক নিরীক্ষণের পরিস্থিতিতে কোন কৃতত্তিমতা থাকে না, এ কারণে এরূপ নিরীক্ষণে ব্যক্তির আচরণ স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে থাকে।

অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রিত উপর নিরীক্ষণে সমাজবিজ্ঞানী কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য পরিকল্পিতভাবে কোন ঘটনা সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করেন। পর্যবেক্ষণকার্য যাতে ব্যাক্তি কেন্দ্রিক না হয় সেদিকের পর্যবেক্ষক কে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া, পর্যবেক্ষকের প্রচুর প্রশিক্ষণ জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন।

বাস্তব জীবনধর্মী পদ্ধতি

সমাজ মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীগণ এ পদ্ধতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। এ পদ্ধতিতে অভিশপ্ত কোন দল বা উপদলের আচরণ সম্বন্ধে পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ করার জন্য প্রয়োজন বলে দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট দলের সাথে বসবাস করেন। পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যক্তি বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সামাজিক আচরণ করে তা গভীরভাবে অনুধাবন করা। বাস্তব জীবনধর্মী পদ্ধতিতে গবেষক ব্যক্তিকে কৃত্রিম পরিবেশে পর্যবেক্ষণ করেন না, বরং তিনি ব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের উপস্থিত হয়ে ব্যক্তির সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে পর্যবেক্ষণ করেন।

সাক্ষাৎকার পদ্ধতি

সামাজিক ব্যবহার সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি জনপ্রিয়তা সর্বজনবিদিত। সাক্ষাৎকার শব্দটি তিনটি অংশের মাধ্যমে পর্যালোচনা করা যায় যেমন ; সাক্ষাৎ গ্রহণকারী, সাক্ষাৎ দাতা , আঘাত প্রক্রিয়া। যে ব্যক্তি সাক্ষাৎ গ্রহণ করেন তাকে সাক্ষাৎ গ্রহণকারী বলা হয় আর যে ব্যক্তি সাক্ষাৎকার পূর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয় তাকে সাক্ষাৎদাতা বলে। সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া হল সাক্ষাৎ গ্রহণকারী ও সাক্ষাৎদার মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া।

সাধারণ সাক্ষাৎকার সঙ্ঘবদ্ধ ও অসম্ভবদ্ধ হতে পারে। সংঘবদ্ধ সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী উত্তরদাতার কাছ থেকে কাঠামো তো প্রশ্ন মারার মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করেন। কিন্তু সংঘবদ্ধ সাক্ষাৎকারে কোন সুনির্দিষ্ট বিষয় থাকে না। সাক্ষাৎ গ্রহণকারী নিশ্চিত হবেন যে তিনি সব তথ্য উত্তরা তার কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। তারা নির্ভুল।

প্রশ্নমালা জরিপ পদ্ধতি

এ পদ্ধতিটিকে প্রশ্নমালা পদ্ধতি ও জরিপ পদ্ধতিতে কিভাবে আলোচনা করা যায়। তবু এখানে দুটি পদ্ধতিকে একত্রে আলোচনা করা হয়েছে। এর কারণ হলো প্রশ্নমালা পদ্ধতি সাধারণত নমুনা জরিপে ব্যবহৃত হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে নমুনা জরিপকার্য প্রশ্নমালা হল অন্যতম মাধ্যম। প্রশ্নমালা জরিপ পদ্ধতিতে একটি ব্যাপক নিরীক্ষণ বলা হয়। কারণ এ পদ্ধতিতে কোন একটি বিষয় সম্বন্ধে বিপরীত সংখ্যক লোকের মতামত মনোভাব সহজে যাচাই করা যায়। সামাজিক আচরণ অনুদানের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষক প্রজন্তুর দুটি কাজ করে থাকেন। একটি হল জরিপ কাজের জন্য প্রশ্নমালা প্রণয়ন এবং দ্বিতীয়টি হল জনসংখ্যায় কতগুলো বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভাগ করেন নমুনা নির্ধারণ।

পরীক্ষণ পদ্ধতি

উপত্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতির স্থান সব পদ্ধতির শীর্ষে। সমাজ মনোবিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে সমাজ মনোবিজ্ঞানীগণ সামাজিক ব্যবহার সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ কালী পরীক্ষণ পদ্ধতিকে ব্যবহার করেন।

এছাড়া বিভিন্ন পদ্ধতি আছে, যার মাধ্যমে সমাজ মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা করা যায়।

 

শেষ কথা : আজকের পোস্টে আমরা, ( Social psychology ) সমাজ মনোবিজ্ঞান কি? সমাজ মনোবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সমাজ মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু, সমাজ মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও মনোবিজ্ঞানের কোন বিশেষ প্রশ্ন বা সাজেশন থাকলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন :

Facebook Page : https://facebook.com/rvwbd/

1 Comment

  1. Pingback: বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতি এবং কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা কর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *